গল্প - তিন চোরের কাহিনী
লেখক - Writers Rifat Ali Sayed
{ ছোট গল্প }
গান গাইতে গাইতে সামনে থাকা ভদ্র লোকটির পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ টা নিয়ে নিলো স্বর্ণা ।
সময় নষ্ট না করে একটা ভিড়ের মধ্যে ঢুকে আরো কয়েকটা মানিব্যাগ গায়েব করে একটা নিরব গলির মধ্যে এসে দাঁড়ালো।আর একে একে ৭টি মানিব্যাগ বের করে সামনে থাকা একটি টেবিলের উপর রাখলো।
এক পা দিয়ে চেয়ার টেনে বসে টেবিলের উপর থেকে সব চেয়ে দামি মানিব্যাগটা হাতে তুলে নিলো।
স্বর্ণা : বাহ্ স্বর্ণা বাহ্।আজ তো তোর কপাল খুলে গেছে।
মনে মনে অনেক কথা চিন্তা করে মানিব্যাগটা খুললো।আর মনিব্যাগটা দেখেই তার চোখ কপালে।
স্বর্ণা : ফকিরের বাচ্চা ফকির।তুই ফকির তোর ১৪গুস্টি ফকির , হারামজাদা।শয়তান ছেলে , জাতীয় কিপ্টা ।এত দামি মানিব্যাগের মধ্যে কেউ ২ টাকা রাখে সেটা তোকে না দেখলে বুঝতামই না।মানিব্যাগের দাম হবে কম করে ৫০০ টাকা।আর তার ভেতর আছে কিনা শুধু মাত্র ২ টাকা।শালা খাড়ুস।তুই তো বেচারা মানিব্যাগটাকেই অপমান করলি। ৭ জন্মেও আমি তোর মতো মানুষ দেখিনি।আমার ১২ বছরের চুরি করার অভিজ্ঞতায় তুই ই ফাস্ট।যার মানিব্যাগে ২টাকা পেলাম😧😧
স্বর্ণা যখন মনে মনে মানিব্যাগ ওয়ালার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছিলো । তখনি হঠাৎ কোথা থেকে একটা ছেলে এসে বাজ পাখির মতো স্বর্ণার হাত থেকে মানিব্যাগটি ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো।
হঠাৎ মানিব্যাগ হাত থেকে ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ায় স্বর্ণা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেল।সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলের হাতে তার মানিব্যাগ।
স্বর্ণা : ঐ মিয়া।আমার মানিব্যাগ কেন নিসেন ( রেগে )
অপরিচিত : কে বলছে এটা আপনার মানিব্যাগ??এটা আমার মানিব্যাগ।দেখুন উপরে নাম ও লেখা আছে জ রিফ আলী।
স্বর্ণা : জরিফ আলী ( অবাক হয়ে ) বিশ্বাস হয়না এমন একটা হ্যান্ডশাম ছেলের নামও জরিফ আলী হতে পারে ( হাসতে হাসতে )
অপরিচিত : ও হ্যালো আমার নাম রাহাত।এটা কার নাম কে জানে।
স্বর্ণা : তার মানেহ ( রেগে ) মানিব্যাগটা আপনার না।
অপরিচিতঃ-আমার না কিন্তু আমার পরিচিত একজনের।
স্বর্ণা : কার ?
সাঈদ : আমার। ( হঠাৎ একটা ছেলে সামনে এসে )
স্বর্ণা পাশে তাকিয়ে দেখলো ব্লাক সানগ্লাস পরা একটা লোক তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
স্বর্ণা : ওহ । তো আপনি সেই জরিফ আলী।মানে সেই খানদানি ফকির । যার মানিব্যাগে মাত্র ২টাকা থাকে ।😡
সাঈদ : অরিক্ত কথা আমার পছন্দ না । আমার মানিব্যাগ আমায় ফিরিয়ে দিন।
স্বর্ণা : 😒যেভাবে বলছেন মনে হচ্ছে যেন মানিব্যাগে কয়েক কোটি টাকা আছে।নিন আপনার ফকির মার্কা মানিব্যাগ।আর আমার সামনে থেকে দফা হয়ে যান😡
সাঈদ কিছু বললো না । মানিব্যাগটা নিয়ে গলি থেকে বেরিয়ে গেল । আর তার পেছন পেছন রাহাতও।
রাহাত : ভাই এটা তো তুই চুরি করছিলি । তাহলে ঐ মেয়ের হাতে কি করে গেল।
সাঈদ : সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা । আমার চুরি করা মানিব্যাগ অন্য একজনের হাতে কী করে যেতে পারে ।
রাহাত : এমনটাও তো হতে পারে ঐ মেয়েটা আমাদের চেয়ে বড় চোর । তুই অন্যজনের পকেট থেকে এটা মেরে দিয়েছিস,আর তোর পকেট থেকে মেয়েটা মেরে দিয়েছে।
সাঈদ : শাটআপ । তুই মেয়েটাকে দেখেছিস কতটা সুন্দর আর দামি পোশাক পড়ে আছে।আবার হাতে আই-ফোন ও আছে।কোন কোটিপটির মেয়ে হবে হয়তো।
রাহাত : তাহলে...........।
সাঈদ : চুপচাপ আমার সাথে চল।আর একটা কথাও না।
রাহাত : ওকে।
স্বর্ণা টাকা গুলো গুণে গলি থেকে বের হয়ে অন্য রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো।সাথে মুখে গান তো আছেই,,,বয়স আমার বেশি না,,ওরে কুদ্দুসের আব্বা,,চুল কড়া পাহি গেছে বা...তা...সে।
চারদিক ঘুরে ফিরে এবার একটা কোট-ট্রাই পরা লোকের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো স্বর্ণা ।
দেরি না করে সুযোগ বুঝে নিজের চাল'টা চেলে দিলো।আর নতুন একটা মানিব্যাগ হাতিয়ে নিলো।
দূর থেকে স্বর্ণা কে অনুসরণ করছিল রাহাত আর সাঈদ
রাহাত : 😲😲😲
সাঈদ : 😳😳😳
দুইজনেই অবাক হয়ে গেল । মনে হচ্ছে কোন ভূত দেখে ফেলেছে ।
রাহাত : অনেক বড় কোটিপতির মেয়ে ।
সাঈদ : সেটাই দেখতেছি ।
রাহাত : এ তো আমাদের চেয়ে বড় চোর । এক কথায় খানদানি চোর । একে কোন মতে আমাদের দলে নিয়ে নিতে পারলে তো কেল্লাফতে ( হেসে বলল ) টাকা আর টাকা
সাঈদ : স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর।চল আগে ওর সাথে কথা বলি।
স্বর্ণা আপন মনে টাকা গুনছিল আর তখনি আগমন হলো সাঈদ আর রাহাতের।
রাহাত : হাআআআই ( মুসকি হেসে সুর দিয়ে বললো )
স্বর্ণা : বাই ! কি করছো এখানে ! কেন এসেছো😡উদ্দেশ্য কি😡মতলব কি😡কি চাও😡দফা হয়ে যাও এখান থেকে ( একটু রেগে বললো )
সাঈদ : ও হ্যালো ! দফা হয়ে যেতে তো আসিনি।কিছুক্ষণ আগে কীভাবে একটা ভদ্রলোকের মানিব্যাগ চুরি করলে সব দেখলাম।শুধু দেখিনি ফোনে ভিডিও ও করে নিয়েছি
স্বর্ণা : মা মানেহ ( তুতলিয়ে )কি চান কি আপনারা ।
রাহাত : আমরা চাই তুমি আমাদের দলে চলে আসো
স্বর্ণা : মানেহ ( অবাক হয়ে )
সাঈদ : মানে তুমি যাই আমরাও তাই । কথাই আছে না ,একের থেকে দুই ভালো আর দুইয়ের থেকে তিন ভালো😊
স্বর্ণা : ও আচ্ছা । তাহলে তোমরাও চোর । তোও তোমরা কত টাকা আয় করো দিনে ।
রাহাত : ১৫০০০- ১৬০০০ হাজার টাকা।
স্বর্ণা : অনেক কম । আমি তোমাদের দলে যেতে পারবো না । আমি উপর লেভেলের চোর । আর তোমরা নিচের লেভেলের
রাহাত : তোমার সাথে এক দলে থাকলে আমরাও উপর লেভেলের হয়ে যাবো ।
সাঈদ : আমারে নিচ লেভেলের চোর বলছো । তা দিনে তোমার কত আয় হয়?
স্বর্ণা : ২২০০০-২৩০০০ হাজার টাকা।এই দেখো এই মাত্র এই লোকের মানিব্যাগে ১২৩৩৫ টাকা পাইছি ।
সাঈদ অবাক হয়ে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না ।
রাহাত : এক আঙ্গুলের শক্তির চেয়ে পাঁচ আঙ্গুল এক সাথ করলে শক্তি একটু,,,একটু না অনেকটাই বেশি হয়।
স্বর্ণা : ( কিছুক্ষণ ভেবে ) তো মিলাও হাত।
___________________ সমাপ্তি ____________________