পরিপূর্নতায় তুই Poripurnotay Tui
last part
লেখকঃ Arian Sumon
এমন সময়েই আম্মু ফোন দিল।
আমিঃ হ্যা আম্মু বলো
আম্মুঃ কোথায় তুই? যলদি বাসায় আয়।
আমিঃ কেন কিছু হয়েছে কি?.
আম্মুঃ বাসায় আয় যলদি । আসলেই দেখতে পারবি।।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। হলো টা কি আবার। সঞ্জিতা কিছু করে বসে নি তো আবার?
যাহোক আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ছুটলাম। বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নাই।
দাড়োয়ান এসে বলল,,
দাড়োয়ানঃ স্যার আপনার বউ এর প্রসবের ব্যাথা উঠেছে। ওনাকে নিয়ে আপনার আব্বু আম্মু হাসপাতাল চলে গেছে। আমাকে বলে গেছে আপনি আসলে যেন আপনিও চলে যান।
আমিঃ কিইইই। ওকে। তুমি বাড়ি দেখ আমি গেলাম।
আমি তারাতারি গাড়ি নিয়ে চললাম হাসপাতাল। কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলাম। গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনেই দেখি আব্বু আম্মু বসে আছে। আমি ওনাদের কাছে গেলাম। ওনারা চিন্তিত আমি বুঝতে পারতেছি। আমারও বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা।
কিছুক্ষন পর নার্স আসল।
নার্সঃ এখানে সুমন কে?? :
আমিঃ আমি সুমন।
নার্সঃ আপনি আমার সাথে ভিতরে আসুন।
আমি গেলাম ভিতরে। গিয়ে দেখি সঞ্জিতা ব্যাথায় চিল্লাচ্ছে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওরে দেখে আম্মুর কথা মনে পড়ল। আমার আম্মুও এভাবেই আমাকে,,,
যাহোক আমি সঞ্জিতার পাশে গিয়ে বসলাম। সঞ্জিতার হাত ধরলাম। সঞ্জিতা আরো বেশি শক্ত করে আমার হাত ধরল
সঞ্জিতাঃ সুমন আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি। অনেক যন্ত্রনা দিছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমিঃ কি বলছ এসব। ওসব কিছু না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটাই বড়।
সঞ্জিতাঃ না। আমি হয়ত আর বাঁচব না। তুমি ক্ষমা না করলে আল্লাহ তায়ালা ও যে আমাকে ক্ষমা করবেনা।
আমিঃ সঞ্জিতা থামো তুমি। আমি আছি তো। আমি থাকতে তোমার কিছু হতেই পারেনা।
সঞ্জিতাঃ মাফ করে দিও আমাকে।
আমিঃ আমি মাফ করে দিছি অনেক আগেই। এবার চুপ করো।
সঞ্জিতা প্রসবের ব্যাথায় কাঁদছে। আমার ও কান্না পেয়ে গেল। চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেল। আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। মন হচ্ছে যে আমার কাছ থেকে কেউ ওরে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সব কিছু শান্ত হয়ে গেল।।
ডাক্তারঃ অভিনন্দন আপনাদের ছেলে হয়েছে।
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। সঞ্জিতা শুনেছ আমাদের ছেলে হয়েছে।
সঞ্জিতা চোখ খুলল
সঞ্জিতাঃ আমার ছেলেকে আমার কোলে দাও।
নার্স দিল কোলে।
সঞ্জিতাঃ সুমন আজ তোমাকে একটা দায়িত্ব দিব। প্রমিস করো রাখবা?
আমি সঞ্জিতার হাত ধরলাম।
আমিঃ তোমাকে ছুয়ে বলছি রাখব।
সঞ্জিতাঃ আমার ছেলেকে তোমাকে দিয়ে গেলাম। ওরে তুমি মানুষের মত মানুষ করে তুলবা।
ওর কথা শুনে কলিজাটা ফেটে গেল।
আমিঃ দিয়ে গেলাম মানে। তুমি কোথায় যাবা?
সঞ্জিতাঃ আমাকে আল্লাহ ডাকছে। আমার সময় নেই। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
সব কিছু নিস্তব্ধ। সঞ্জিতা কথা বলছেনা। চলছেনা সঞ্জিতার হার্টবিট।
আমি সঞ্জিতা সঞ্জিতা বলে ডাকছি না কোনো সাড়া শব্দ নেই।
আমিঃ ডাক্তার দেখেন তো আমার সঞ্জিতার কি হয়েছে।
ডাক্তারঃ sorry she is no more...
আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। না এ হতে পারেনা। আল্লাহ তুমি এত নিষ্ঠুর হতে পারোনা । একবার নিয়েছে। এবার সারাজীবনের মত নিয়ে যেতে পারোনা। আমি বেচে থাকতে সঞ্জিতার কিছু হতে পারেনা।
আমিঃ সঞ্জিতা উঠো এই সঞ্জিতা উঠো। আমি সুমন ডাকছি উঠো প্লিজ উঠো।
আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। যখন জ্ঞান ভাঙল দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সঞ্জিতার বাবা মা ভাই বোন এসেছে। কান্না করছে। এক পাশে নতুন মেহমান আসা আমাদের ছোট ছেলেটিও চিৎকার করে কাঁদছে।
আমি আবার কেদে দিলাম। শেষ সব শেষ।
"
"
"
"
"
"
"
"
৭ বছর পর,,,,,
সাইফঃ আব্বু আমরা প্রতিবছর এখানে কেন আসি?
আমিঃ বাবা। এটা তোমার মায়ের কবর। তোমার মা এখানে শুয়ে আছে।
সাইফঃ আমার মা?
আমিঃ হুম বাবা।
সাইফঃ মা মা
বলে কেদে দিল। আমি কোনোরকমে সামলে নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম।
আম্মুঃ কিরে দাদুভাই কাদে কেন?
আমিঃ ওর মায়ের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম।
আব্বুঃ দাদুভাই এখানে আসো।
সাইফ আব্বুর কাছে গেল।
আব্বুঃ চলো আমরা ছাদে গিয়ে ক্রিকেট খেলি।
দেখলাম সাইফ হেসে দিল।
সাইফঃ চলো দাদু। তবে আমি আগে ব্যাটিং করব।
আব্বুঃ ওকে।
আব্বু আর সাইফ ছাদে চলে গেল। আমি বসে পরলাম সোফায়। আম্মু আমার পাশে বসল।
আম্মুঃ আর কত।এবার একটা বিয়ে কর।
আমিঃ না আম্মু আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি বিয়ে করব না।
আম্মুঃ ছেলেটা মায়ের অভাবে আছে। ওর জন্য অন্তত কর।
আমিঃ করব ভালো কথা। কিন্তু সেই মেয়েটি যদি ওর কেয়ার না করে? ভালো না বাসে?
আম্মুঃ আমরা ভালো মেয়ে দেখে শুনেই বিয়ে দিব।
আমিঃ সরি আমি পারব না। আমি সঞ্জিতাকে কথা দিয়েছিলাম। সাইফ কে মানুষের মত মানুষ করব। আমাকে সেটাই করতে দাও।
আম্মুঃ এজন্য কি সারাজীবন এভাবেই থাকবি নাকি?
আমিঃ হুম থাকব।
এই বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
"
"
রাতের বেলা আমি আর সাইফ ছাদে বসে আছি।
সাইফঃ আব্বু আমাকে ফোন কিনে দিবা??
আমিঃ কিইইইই বললা??
সাইফঃ মোবাইল মোবাইল
আমিঃ আগে পড়াশোনা করো ঠিক কইরা। বড় হলে কিনে দিব।।
সাইফঃ না। আমার সাথের বন্ধুরা মোবাইল চালায়। আমিও কিনব আমিও চালাব
আমিঃ বললাম তো বড় হলে দামি চেয়ে একটা কিনে দিব।
সাইফঃ না না।
আমিঃ চুপ। একদম চুপ। পড়াশোনার নাম গন্ধ নাই। আবার মোবাইল চাওয়া হচ্ছে।
ধমক খেয়ে সাইফ উঠে চলে গেল। কোথায় আর যাবে এখন দাদা দাদির কাছে গিয়ে বলবে। আর আমার উপর অভিমান করে থাকবে। তারপর আমি ঘুরতে নিয়া যাব আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
সঞ্জিতার কথা খুব মনে পড়ছে। একবার হারিয়েছি। যাই ভাগ্যের জুরে জীবনে পেয়েছিলাম। তাও বেশিদিন স্থায়ি হলো না। আল্লাহ তার কাছেই নিয়া গেল।
আকাশের দিকে তাকালাম।
সঞ্জিতা ভালো আছো তো ওপারে?? আমিও আসব একদিন।দেখে যাও আজও এ মনে শুধু তুমি আর তুমিই আছ।
আমি শুধু পেতে চাই যেতে চাই
চিরকাল তোমার স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে ।
এখানে চরম নৈরাজ্যে আর পারি না
উন্মুখ তোমার সন্নিধানে আকুল আমি
মণি মুক্তা খচিত জীবনের আবহ
চাইনা আমার সূর্য -চন্দ।
কাতর স্বরে ব্যাকুল আকুতি...
আমারে নাও,এখনি নাও ।
আমার আমৃত্যু স্বপ্নে সব সময় সকল বৈচিত্র্যে
যত দূরেই যাই আমি যে প্রান্তেই থাকি
ক্ষত বিক্ষত অন্তরে আমার
শুধুই তুমি শুধুই তুমি !!
কান্না পেয়ে গেল। না এখন কান্না করা যাবেনা। সাইফ নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এটাই এখন আমার পণ।
যাই নিচে গিয়ে সাইফ কে পটাই গিয়ে। নাহলে আবার আমার সাথে কথা বলবে না।
THE END
#সমাপ্ত
ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন। এবং কাউকে ধোকা দিবেন না। তাহলে সেটা একদিন নিজের উপর আসবেই আসবে।