লেডি কুইন পর্ব ২৭&শেষ | Leady Queen part 27& end | storyBD.xyz

 লেডি কুইন 

পর্ব ২৭&শেষ 

End part 

লেখা: Meherab Kabbo 





রায়হান চৌধুরী ভূত দেখার মতো অবস্থা।  তার চারজন লোক মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।  মেহেরাব কোনরকম উঠে দাঁড়িয়েছে।  সামনে বড় বড় চুলগুলো চোখের উপর পড়েছে।  রায়হান চৌধুরী বলে উঠলো 

-গুলি কর ওকে।  মেরে ফেল। 

রায়হান চৌধুরীর মুখ দিয়ে কথা বেড়োতে যতটুক সময় মেহেরাব সেকেন্ডের ভেতর গুলি চালিয়ে দিলো সবাই মাটিতে পড়ে গেলো।  শুভ্রের মা হেসে যাচ্ছে জোরে জোরে  আর বলছে 

-রায়হান চৌধুরী তুই ঠিক মতো টোপ ফেলতে পারিসনি।  তার আগেই মেহেরাব টপ ফেলে রাখছিলো৷ শুধু সময় আর সুযোগের অপেক্ষায়।  

শুভ্রের মায়ের কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেলো।  শুভ্র বলে উঠলো 

-মা তুমি মেহেরাবকে আগে থেকে চিনতে।  

-হ্যা।  আজ আমরা যে পজিশনে দাঁড়িয়ে আছি শুধু মাত্র ওর জন্যই।  

আরোহী বলে উঠলো 

-আপনি কেন এতোদিন বলেননি। ও কে? 

-সময়টা তো আসেনি তাই বলেনি।  আমি দেশে এসেছি শুধুমাত্র ওর কথায়।  ওর সব প্ল্যান আমাকে আগে থেকে জানিয়েছিলো৷  


মেহেরাব বলে উঠলো 

-লেডি কুইন নামটা কখনো মুছবে না৷  না কেউ তা কেড়ে নিবে।  

রায়হান চৌধুরী বলে উঠলো 

-ক ক ক কে তুই।  

এর ভেতর পাচটা গাড়ি চলে আসলো।  গাড়ি থেকে নেমে মেহেরাবের পিছনে চেয়ার দিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লো।  মেহেরাব চেয়ারে বসলো।  একটা মেয়ে এসে মেহেরাবের মুখে সিগারেট দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়ালো৷ আরোহী মর্জিনা খান কুহু লিমন আশফা শুভ্র নেহা হৃদয় হা করে তাকিয়ে আছে মেহেরাবের দিকে।  মেহেরাবের ইশারায় সবার বাধন খুলে দিলো।  রায়হান চৌধুরী ভয়তে কাঁপতে শুরু করলো।  সবাইকে এক সাইডে নিয়ে গেলো মেহেরাবের লোকজন৷  মাঝখানে দাড়িয়ে আছে রায়হান চৌধুরী।  মেহেরাব সিগারেট এক টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে 

-ভয় পাস না  ভাতিজা। আমি আসি না।  

রায়হান চৌধুরী ঘামড়ে যেয়ে 

-তু তু তু তুই।  তাহলে 

-হ্যা আমি কিন্তু সবকিছু এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে।  আমি তোর চালচলন দেখে ঠিকি বুঝতে পেরেছি।  আর যখন জানতে পেরেছি রাজ তোর ছেলে৷ 

রায়হান চৌধুরী মেহেরাবের দিকে তেড়ে আসতে যাবে তখনি মেহেরাব বলে উঠলো 

-আরে এত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন?  তোর পাপের ঘর তো পূরণ হয়ে গেছে।  তোর ছেলেকে তো আমি মেরেছি নিজে।  ওহ  ভূল হবে তোর ছেলেকে কেন? তোর সকল লোককে আমি মেরেছি।  তুই মধুবংশকে দিয়ে গ্রামের ক্ষতি করতে চেয়েছিলি। সেই মধুবংশকে আমি মেরে দিয়েছি।  


মেহেরাবের এমন কথা শুনে সবাই হা হয়ে পড়লো।  

আরোহী মর্জিনা খানকে বললো 

-মাম্মি ও কি বলেছে শুনেছো।  

-হ্যা।  আমি ওকে চিনতে পারলাম না।  আমি এত মানুষের সাথে উঠাবসা করেছি কিন্তু ওকে।  

-আমাকে তাহলে কোন মহিলা নিয়ে আসলো হাসপাতালে। 

শুভ্রের মা বলে উঠলো 

-আমি নিয়ে গেছিলাম তোমাকে মেহেরাবের কথা মতো।  আমি শুভ্রকে বলছিলাম মেহেরাব যতক্ষণ না বাসায় আসবে ততক্ষণ আমি বাসায় থাকবো না।  

শুভ্র বলে উঠলো

-তাহলে তুমি সব জানতে আমাকে একবার ও বলার প্রয়োজন করোনি।  




রায়হান চৌধুরী বলে উঠলো 

-আমার কাছে জাস্ট একটা পিস্তল দে তোকে ২য় বার কথা বলার সুযোগ দিবো না।  

-আচ্ছা তাই নাকি।  

মেহেরাব কথাটা বলে হাতের পিস্তলটা রায়হান চৌধুরীর দিকে ছুড়ে মারলো।  রায়হান চৌধুরী পিস্তলটা তুলে হাতে নিতে মেহেরাব বলে উঠলো  

-এত অস্হির হোস না ভাতিজা৷  লোড করে নে আগে।  

রায়হান চৌধুরী পিস্তল লোড করে 

-তুই কেন লুকিয়ে এই গেইমটা খেললি। 

-তুই লুকিয়ে গেইম বানাতে পারলে আমি অবশ্যই খেলতে পারবো।  এতটা কাঁচা বুদ্ধি আমার মাথায় হয়নি।   

রায়হান চৌধুরী টিগ্যার চিপ দিতে যাবে তখনি রায়হান চৌধুরীর কপাল ভেদ করে গুলি চলে গেলো।  লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।  মেহেরাব পিছনে তাকিয়ে হেসে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে 

-আমার কাজ শেষ আন্টি।  আপনারা এখন বিপদমুক্ত।  আর কোনো শত্রু নেই ।  যদি ও কখনো শত্রু হয় তাহলে মেহেরাব তাদেরকে উৎখাত করে দিবে৷  লেডি কুই যেমন নামটা ছিলো ঠিক সেই নামটাই থাকবে।  আশরাফ চৌধুরী সবসময় কথার বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।  


মেহেরাব কথাগুলো বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।  সবাই হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকলো। 


মর্জিনা খান আশরাফ চৌধুরীর লোকজন গাড়ি নিয়ে চলে আসলো।  আশরাফ চৌধুরী বলে উঠলো 

-আরোহীকে আগামিকাল সন্ধ্যায় নিয়ে চলে এসো।  সেখানেই ওর সাথে বিয়ে দিবো আমার ছেলের।  

মর্জিনা খান বলে উঠলো 

-আজকে এমন একটা বিপদ গেলো তুমি কাল বিয়ের ব্যবস্থা করছো। 

-হ্যা।  

আশরাফ চৌধুরী নীলকে নিয়ে  চলে গেলো।  আরোহী বলে উঠলো 

-মা আমি মেহেরাবকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। 

-আরোহী তুমি ভূলে যেয়ো না আমার কথার মূল্যটা কতটা। ও আমাদের বাঁচিয়েছে এতে ওর কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবো।  তাই বলে আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।  

আরোহীকে কুহু লিমনকে নিয়ে মর্জিনা খান চলে গেলো।



শুভ্র ঠাই ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।  আশফা ও বেশ অবাক। শুভ্রের মা মুচকি হাসছে 

-মা তুমি এখনো হাসছো।  তুমি আগে কেন আমাদের বলোনি।  

-ধৈর্য ধর বাবা।  খেলা তো এখনো শেষ হয়নি৷  

শুভ্র অবাক হয়ে 

-মানে।  

-ওয়েট করতে থাক ।

শুভ্রকে আর আশফাকে নিয়ে ওর মা চলে গেলো।  


(রহস্য রহস্য এখনো থেকে গেলো) 



পরেরদিন সন্ধ্যায় 

মর্জিনা খান আরোহীকে নিয়ে  রওনা হলো ক্লাবের দিকে।  আরোহী কুহুকে বললো 

-মেহেরাবের সাথে কোন প্রকার কন্ট্রাক্ট করতে পারছি। 

-না রে।  

-একটা বার আমার সাথে কথা বলে তো যেতে পারতো।  

-এটা মেহেরাব অন্যায় করেছে। 

-ওকে হয়তো আর কখনো দেখতে পাবো না। 

-হুম।  


গাড়িটা এসে ক্লাবের সামনে দাঁড়ালো।  চারপাশ রাস্তা বেশ আলোকিত বিভিন্ন রংয়ের বাতি দিয়ে।  শুভ্রের মা, শুভ্র আশফা গেইটের কাছে ছিলো।  আরোহী গাড়ি থেকে নামতে তার কাছে এগিয়ে গেলো।  আশফা বলে উঠলো 

-তোকে তো আজ রাণী লাগছে।  নীল তো চোখ ফেরাতেই পারবে না।  

আরোহী কিছু না বলে সামনের দিকে এগোলো।

লেডি কুইন পর্ব ২৭&শেষ 


দুই পাশে মেয়েরা ফুল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আরোহী গেইটের ভেতর ঢুকতে সবাই ফুল ছিটাতে লাগলো।  আরোহীর মুখে আনন্দের কোনো ছাপ নেই।  নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে কার বা আনন্দ থাকে।  মুখটা গোমড়া করে হেটে যাচ্ছে।  সবাই লক্ষ্য করলে ও কেউ কিছু বললো না।  আরোহী রুমের ভেতর ঢুকে মাঝখানে দাঁড়াতেই রুমটা অন্ধকার হয়ে যায়।  চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে সবাই একটু ঘাবড়ে যায়।  কেউ কেউ বলতে লাগলো কারেন্ট যাওয়ার আর টাইম পেলো না।  এখানের লাইট জ্বলতে এতক্ষণ কোনো ব্যবস্থা নেই নাকি।  আরোহী ঠাই দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে।  আরোহীর সামনে লম্বা মতো একজন এসে দাঁড়ালো।  আরোহী চমকে যায়।  হাটু গিড়ি দিয়ে বসে আরোহীর বাম হাত ধরে।  অন্ধকারে চেনা মুশকিল।  আরোহী ভয় পেয়ে গেলো।  হাতটা ঝাটকা মেরে সরাতে যাবে তখনি কারেন্ট চলে আসলো।  সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।  যেনো ভূত দেখছে।  আরোহী হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মুখে হাত দিলো৷  আরোহীর আঙ্গুলে আংটি পড়ানো ততোক্ষণে হয়ে গেছে।  আরোহী বলে উঠলো 

-মেহেরাব তুমি।

-হুম সারপ্রাইজ।  

আরোহীর চোখে মুখে আনন্দের হাসি।  আরোহী বলে উঠলো

-আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি এটা।  

আরোহী খুশিতে মেহেরাবকে জরিয়ে ধরে গালে কপালে চুমু খেলো।  আরোহীর এমন পাগলামি দেখে মেহেরাব খুব খুশি।  আরোহী বললো 

-তোমার সাথে আমার বিয়ে। নীল তাহলে কই। 

-নীল এ আমি।  নাম চেন্জ 

সবাই অবাক হয়ে গেলো।  আশরাফ চৌধুরী, শুভ্রের মা এগিয়ে আসলো।  হাসতে হাসতে।  মর্জিনা খান অবাক হয়ে আশরাফ চৌধুরীকে বললো 

-এটা কি হচ্ছে?মেহেরাব এখানে কেনো নীল কোথায়

-নীলই হচ্ছে মেহেরাব।  

মর্জিনা খান অবাক হয়ে গেলো।  


আরোহী অবাক হয়ে 

-গ্রামের মানুষ তোমাকে মেহেরাব বলে ডাকলো কেন? নীল না বলে 

-আমাকে তো সবাই মেহেরাব নামেই জানে৷  

-আমার সাথে চিটিং না করলে পারতা।  


আশফা শুভ্র হৃদয় নেহা পাশে এসে

-তুই এত বড় মাপের ছেলে হয়ে ও সাধারণ ভাবে চলফেরা করলি।  সবার অপমান সহ্য করলি আমি না ভাবতে পারছি কি ভাবে পারিস? 

-সিক্রেট।  

-আমাদের ও শেখায় দে আমরা ও শিখে রাখি।  কাজে দিবে পরে।  

মেহেরাব মুচকি হাসছে।  

সবাইকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আশরাফ চৌধুরী আর মর্জিনা খান।  কাজী এসে বিয়ের কাজটা কমপ্লিট করলো।  আরোহীকে নিয়ে রওনা হলো মেহেরাব।  বড় বাড়ির সামনে এসে থামলো গাড়ি৷  আরোহীকে নিয়ে রুমে নিয়ে গেলো৷  যেখানে ফুল দিয়ে পরিপূর্ণ করে সাজিয়ে রেখেছে।  সবাই বেশ আড্ডা মজা করছে।  



মর্জিনা খান আশরাফ চৌধুরীকে বললো 

-তোমার ছেলে দেশ এ আমাকে বলোনি কেন? 

-আমি নিজে ও জানতাম না। ও এখানে।  

-তাহলে রায়হান চৌধুরী অন্য ছেলেকে ধরলো কেন? 

-ছবি চেঞ্জ করে দিয়েছে । ঐ ছেলেকে রেখে এখানে এসেছে।  ঐ ছেলেই সবকিছু করলো ।  আমি কল করলে আমার টা ওখান থেকে পাশ হয়ে এসেছে।  



মেহেরাব রুমের ভেতর ঢুকলো।  আরোহী গোমটা মাথায় দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।  মেহেরাব খাটের উপর বসতেই 

-বসবা না এক দম 

-কেন? 

-এতদিন আমাকে তুমি না বলে কষ্ট দিছো সেই শাস্তি পেতে হবে।  

মেহেরা ভ্রু কুচকে 

-আমি কি জানতাম তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।  

-জানলে আর এত কষ্ট করা লাগতো না।  

-হুম। 

 মেহেরাব বিছানায় বসে পড়ে আরোহীর গোমটা তুলে 

- খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।  আমার মনটা ভরে গেলো তোমাকে দেখে।  

আরেহী লজ্জা পেলো বেশি।  

-যাবে না তো কখনো ছেড়ে।  কষ্ট দিবা না। 

-না দিবো না। । 

-I Love you 

-I love you to


আরোহীকে বুকে টেনে নিয়ে ঠোটে ঠোট লাগিয়ে নিলো৷  অজানা এক শিহরণে দুজনে একত্রিত হলো।  বাহিরে সবাই অনেক খুশি।  হঠাৎ করে বিকট জোড়ে একটা আওয়াজ হলো৷  সবাই যে যার মতো ছুটে গেলো।  আশরাফ চৌধুরী মর্জিনা বেগম ছুটে আসলো।  দেখলো আরোহী মেহেরাবের ঘরে আগুন ধরে গেছে।আশরাফ চৌধুরী আর মর্জিনা বসে পড়লো মাথায় হাত দিয়ে।  ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো।   আশফা শুভ্ররা সবাই কান্না করে দিলো।  চারপাশ থমথমে হয়ে গেলো। ফায়ার সার্ভিস আসলো আগুন নেভানো নিয়ে ব্যস্ত।  এক সময় আগুন নেভাতে সফল হয় । ততক্ষণে চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।  কোনোকিছুরই চিহ্ন নেই আর। 


সমাপ্ত।। 


(সুখ জিনিসটা কার কখন থাকবে। কার কখন থাকবে না।  সব কিছু সুখ দিয়ে সমাপ্ত হয় না। )

1 Comments

Thanks for your Support 💖

Previous Post Next Post