গরীবের আত্বনুভুতি The self-consciousness of the poor
লেখকঃ Arian Sumon
আমজাদ সাহেবঃ সুমন ওই সুমন
সুমনঃ জী স্যার বলুন
আমজাদ সাহেবঃ এক কাপ চা নিয়ে এসো
সুমনঃ জী স্যার এখনি আনছি
সুমন চা নিয়ে এসে আমজাদ সাহেব কে দিল। আমজাদ সাহেব হচ্ছে অফিসের বস। আর সুমন হচ্ছে অফিসের ছোটখাটো কর্মচারী। যাকে বলে পিয়ন।পিয়ন হলেও অফিসের সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। যে যা চায় সেই কাজ টা করতে সে দেরি করে না।
সুমন বেশ কিছুদিন ধরে সমস্যায় পড়েছে। বাসায় বৃদ্ধ বাবা মা। বাবা মারাত্মক অসুস্থ। মাথাউ টিউমার হয়েছে। চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য এক লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সে গরীব এত টাকা পাবে কোথায়?
অফিসের বস আমজাদ সাহেব কে বলবে কি করে? তারা তো তার বেতন মাসের এক তারিখেই দিয়ে দেয়। কিভাবে কি করবে ভাবতে না পেরে আমজাদ সাহেবের কাছে গেল।
সুমনঃ স্যার একটা কথা বলব?
আমজাদ সাহেবঃ এখন নয়। পরে এসো। কাজটা সেড়ে নেই।
সুমনঃ ওকে স্যার।
সুমন বেড় হয়ে আসল। ভাগ্য খারাপ ছিল তাই কিছুক্ষন পরেই আমজাদ সাহেব অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়।
মন খারাপ করে সেদিন সুমন বাসায় যায়।
বাসায় যেতেই,,,
মাঃ কিরে টাকা জোগাড় করেছিস?
সুমন কি করে বলবে যে সে টাকা জোগাড় করতে পারেনি। তার বাবা মা তো তার উপরেই ভরসা করে আছে।
সুমন কিছুই না বলে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তারপর বসে কাদতে শুরু করে দিল। আসলেই গরীব হওয়াও পাপ। হে আল্লাহ তুমি কেন আমাদের গরীব বানিয়েছিলা।
বাবা মায়ের অনেক বড় স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়া। পড়াশোনা ঠিকই করালো। কিন্তু আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
একবার নয় কয়েকবার চাকরির ইন্টার্ভিউ দিয়েছিল।
প্রথমবার,,
চাকরির পরীক্ষা ভালোই দিল। ভাইবা দিতে গেল।
স্যারঃ বাহ বাহ আপনার গ্রেট তো বেশ ভালো। তো ১০ লাখ টাকা দিতে পারবেন?
সুমনঃ কেন স্যার
স্যারঃ বুঝেন না। আপনাকে যে সিলেক্ট করব। আমাদের একটা ইয়ে আছে না।
সুমন আর কি বলবে সে গরীব মানুষ। এত টাকা দিবেই কোথা থেকে। তাই সে কিছু না বলেই উঠে চলে আসল।
এরপরেও কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছিল। বর্তমানে দেশের অবস্থা এমন যে ঘুষ চাকরি হবেনা। আর সুমন গরীব ঘরের ছেলে। তাই সে ঘুষ ও দিতে পারল না। তাই চাকরিও হলো না।
কোনো উপায় না পেয়ে শেষে এই পিয়নের চাকরি টা নেয়।
"
"
সুমনঃ স্যার কাল যে বলছিলাম
আমজাদ সাহেবঃ ওহ হ্যা। ভূলে গিয়েছিলাম। হ্যা বলো কি যেন বলবা?
সুমনঃ আসলে স্যার আমার কিছু টাকা প্রয়োজন
আমজাদ সাহেবঃ কত টাকা?
সুমনঃ এক লাখ টাকা
আমজাদ সাহেবঃ কিইইই। এক লাখ টাকা জীবনে চোখে দেখেঁছ??? আচ্ছা আমি না হয় তোমাকে টাকা দিব পরিশোধ করবা কি করে?
সুমনঃ আমি আপনার অফিসে দিন রাত ২৪ ঘন্টা কাজ করে শোধ করে দিব।
আমজাদ সাহেবঃ পাও তো মাসে মাত্র ৮০০০ টাকা বেতন। সম্ভব না। যাও মাথা গরম কইর না।
সুমন আমজাদ সাহেবের পায়ে ধরে
সুমনঃ স্যার আপনার পায়ে ধরি। আমার বাবা ভিষন অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা দরকার। প্লিজ স্যার টাকা গুলো দিন। ( কাদতে কাদতে)
আমজাদ সাহেবঃ সিকিউরিটি সিকিউরিটি
সিকিউরিটি আসল।
আমজাদ সাহেবঃ একে বাহিরে বেড় করে দাও। আর বলে দাও কাল থেকে অফিসে আসা লাগব না। যতসব
সুমন অনেক কাকুতি মিনতি করে। কিন্তু আমজাদ সাহেবের মায় হয়নি।
লোকগুলো সুমন কে টানতে টানতে অফিস থেকে বড় করে দেয়।
সুমন অনেক ব্যাথা আর কষ্ট নিয়ে বাসায় যায়।
গিয়ে দেখে বাড়ির সামনে ভিড়। ভিড় ঠেলে ঘরে ডুকে দেখে তার আব্বাকে শুয়ে রেখেছে।
একজন এসে বলল; সুমন তুর বাবা মারা গেছে
সুমন দেখে তার মা কাদতেছে। সুমন রুমে যায়।
সুমন পাথর হয়ে যায়। সে পারল না। তার বাবা কে বাঁচাতে। এই শিক্ষিত ভদ্র সমাজ তার বাবাকে বাচাইতে কোনো সাহাজ্য করল না।
সে তার বাবার লাশের পাশে গিয়ে বসে।
সুমনঃ বাবা পারলাম না আমি তোমাকে বাঁচাইতে। কারন আমি যে তোমার অপদার্থ ছেলে। কত কষ্ট করে আমাকে বড় করেছ। পড়াশোনা করিয়েছ।কিন্তু দেখো? আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
এই বলে কাদতে থাকল। হঠাত একটা চিৎকার দিল বাবা বলে। শুয়া থেকে বসে গেল।
সাথে সাথেই সুমনের আম্মু রুমে চলে আসে।
আম্মুঃ কিরে তুর কি হয়েছে
সুমন বুঝতে পেরেছে সে এতক্ষন স্বপ্ন দেখেছে। না মাকে এসব বলা যাবেনা।
সুমনঃ না মা কিছুনা। স্বপ্ন দেখছিলাম।
মাঃ ওহ। উঠে পর। অফিস যাবিনা।
সুমনঃ হুম।
সুমনের মা চলে যায়।।
সুমন ভাবতে থাকে। যদি স্বপ্ন টাই বাস্তব হয়ে যায়। তাহলে সে কিভাবে তার বাবাকে বাচাবে।আর মাত্র তিন দিন সময় রয়েছে অপারেশনের।
সুমন অফিসে যায়। আমজাদ সাহেব অফিসে আসেনি এখনও। আজকে লেট করতেছে।
অনেক লেট করে আমজাদ সাহেব অফিসে আসে। সাথে সাথেই সুমন চা নিয়া ওনার কেবিনে যায়।
সুমনঃ স্যার কাল যে বলেছিলাম?
আমজাদ সাহেবঃ ওহ হ্যা। কাজের চাপে কাল ভূলেই গিয়েছিলাম। বলো কি বলবা
সুমনঃ স্যার আমার বাবা ভিষন অসুস্থ
আমজাদ সাহেবঃ কি হয়েছে তোমার বাবার?
সুমনঃ মাথায় টিউমার ধরা পড়েছে। অপারেশন করাতে হবে।
এটি বলার পরেই সুমন সোজা আমজাদ সাহেবের পায়ে ধরে।
আমজাদ সাহেবঃ আরে করছ কি ছাড়ো
সুমনঃ না স্যার অপারেশনের জন্য এক লাখ টাকা খরচ হবে। আপনি তো জানেন আমার কিছু নেই। প্লিজ স্যার আমাকে সাহাজ্য করুন। প্লিজ স্যার ( কাদতে কাদতে)
আমজাদ সাহেবঃ সিকিউরিটি সিকিউরিটি
সুমনের মনে ভয় শুরু হয়ে গেছে। তাহলে কি স্বপ্নই সত্যি হলো। আমাকে এখন অফিস থেকে বেড় করে দিবে। হায়রে বড়লোক।।
সিকিউরিটির লোক আসল,,
সিকিউরিটিঃ জী স্যার বলুন
আমজাদ সাহেবঃ ক্যাশিয়ার কে ডাকুন
সুমন বুঝতে পারছেনা কি করবে। হয়ত এ মাসের টাকা দিয়ে তাকে বিদায় করে দিবে।
ক্যাশিয়ার আসল
ক্যাশিয়ারঃ জী স্যার বলুন
আমজাদ সাহেবঃ সুমন কে এক লাখ টাকা দিয়ে দিন।
সুমন বিশ্বাসী করতে পারছেনা। আমজাদ সাহেব তাকে এত টাকা দিচ্ছে।
সুমন আমজাদ সাহেবের পায়ে পড়ে যায়।
সুমনঃ স্যার আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবে আমি জানিনা। আপনি মহান স্যার আপনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। আমি সারাজীবন খেটে আপনার টাকা পরিশোধ করে দিব।
সুমন খুশিতে কেদেই দেয়।
আমজাদ সাহেব সুমন কে দাড় করায়। তারপর বলে
আমজাদ সাহেবঃ তুমি আমার অফিসের সামান্য কর্মচারী হলেও। আমি দেখেছি এখানে সবাই কাজে ফাকি দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু তুমি কোনোদিন দেওনি। যা আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। আর এ টাকাগুলো তোমার পরিশোধ করতে হবেনা। এগুলো তোমার কাজের পুরস্কার।
যাও তোমাকে দশ দিনের ছুটি দিয়ে দিলাম। তোমার বাবার চিকিৎসা করিয়ে একেবারে অফিসে আসবা। আরো টাকা লাগলে বলবা।
সুমন খুশিতে কেঁদেই দিল।
তারপর সে অফিস থেকে টাকা নিয়ে বাসায় চলে যায়।তারপর বাবা কে নিয়ে হাসপাতাল নিয়ে গিয়ে অপারেশন করানো হয়। সুমন সুমনের বাবাকে সেবা করতে থাকে।
সুমনের বাবা সুস্থ হয়ে যায় পুরোপুরি।
দশদিন পর অফিসে,,,,
আমজাদ সাহেবঃ তোমার আব্বু কেমন আছে?
সুমনঃ আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়ায় এখন ওনি সুস্থ। আপনি না থাকলে কি যে হতো
আমজাদ সাহেবঃ শুনো তুমি আজ থেকে আমার অফিসের একাউন্টিং ম্যানেজার।
সুমনঃ জী??? কি বলছেন স্যার
আমজাদ সাহেবঃ হুম। আগের জন কাজে অনেক ফাকি দিত।টাকাও চুরি করত। তাই তাকে বেড় করে দিছি। সেই দায়িত্ব এখন তোমার।
আমিঃ আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব।
আমজাদ সাহেবঃ সবই তোমার ভালো কাজের পুরস্কার।
সুমন অফিস করে মিষ্টি কিনে বাসায় যায়। আজ তার বাবা মা অনেক খুশি হবে সে ১০০% সিউর। অবশেষে তার কষ্টের দিন শেষ হচ্ছে।
The end..
সমাপ্ত।
সত্যিই অসাধারণ হয়ছে
ReplyDeleteআমাদের দুইটি সাইটে আপনি,
Comment BackLink করতে চাইলে
করতে পারেন ! আমার সাইটের নাম
www.webangali.com
www.bd-express.top