লেডি কুইন
পর্ব ৭
লেখা: Meherab Kabbo
আরোহী হেলমেট পড়া অবস্থায় কাঁধে উপর হকি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। কুহু পাশে দাড়ালো। আরোহী বলে উঠলো
-এখানে কি টেক টেক খেলছিস নাকি। যে ঐ ছেলের পা জরিয়ে ধরছিস।
অন্য একটি ছেলে বলে উঠলো
-বস একটা না চাইতে আরো দুটো। ছেলেটাকে মেরে এ দুটোকে ও নিয়ে চলো। সারা রাত মাস্তি হবে৷
আরো হেলমেট টা খুলে ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি আরোহীকে দেখে পিছনে সরে গেলো। আরোহী রাগে চোখ লাল করে
-কি বললি তুই। মাস্তি করবি। আয় এখন একটু মাস্তি করি।
-সরি সরি আপু ভূল হয়ে গেছে আর হবে না কখনো। বস পলাও। নাই রক্ষা নেই।
একজন বলে উঠলো
-এই চিকনার জন্য এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আমার ওকে পছন্দ হয়ে। চল তুলে নিয়ে যায়। একান্তে ঝাঝ দেখবো।
আরোহী হকি তুলে মারতে শুরু করলো। বাইক নিয়ে লিমন আরো অনেকে চলে আসলো। সবাই এসে সবগুলোকে আস্তো ধুলায় দিলো। আরোহী ছেলেটার পাশে হকি দিয়ে ভর করে দাঁড়িয়ে
-আমি সবকিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে খেলাটা পছন্দ করি না। ইভটিজিং করিস । ঐ সবগুলোকে ঝুড়ি শাড়ি পড়া আর ঠোঁটে লিবিস্টিক লাগা৷ তারপর ইভটিজিং কাকে বলে দেখাচ্ছি। ।
মেহেরাব আরোহীর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মেহেরাব ধীর পায়ে পিছু সরতে লাগলো। আরোহী পিছন থেকে মেহেরাবের কলার ধরলো। মেহেরাব চমকে উঠলো। পিছে তাকালো আরোহী বলে উঠলো
-তোরা তোদের কাজ কর আমি এটাকে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক হিসেব কিতেব আছে।
সেই মেয়েটা এসে
-আপু তার কোন দোষ নেই। ভাইয়া না থাকলে আজ এতক্ষণে। আপনি ওনাকে ছেড়ে দেন।
-এটা তো তোমার জন্য না। আলাদা হিসেব। ওকে দেখেই তো আসছি। না হলে তো চোখ পড়তো না।
-মানে?
-বাইক চালিয়ে যাচ্ছি কুহুর চোখ পড়ে ওর উপর। ওকে তো খুজতাছিলাম তাই চলে এলাম। এসে দেখি এই অবস্থা । এই অরিন ওকে বাসায় পৌঁছে দিস।
একটা সাদা রংয়ের কার এসে থামলো। গেইট খুলে কারে বসালো। তারপাশে আরোহী বসলো৷ গাড়ি চলতে লাগলো।
এদিকে লিমনরা মিলে সবগুলোকে শাড়ি পড়িয়ে হাতে চুড়ি পড়িয়ে লিপিস্টিক লাগিয়ে সাড়া রাস্তা হাটালো। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে ওদের দিকে। অনেকে জিঙ্গেস করতে লাগলো এমন কেন? কেউ কেউ বলতে লাগলো ইভটিজিং। মেয়েদের ডিস্টার্ব করার শাস্তি। এতদিনে এই বখাটেগুলোর শাস্তি হলো।
সবগুলোকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলো। ডাক্তারের সাথে কথা বললো লিমন
-বুঝতেই তো পারছেন কি কেস?
-হ্যা। সমস্যা নেই। যেটা করার ঐটা করে দিবো যাতে আর কোন মেয়ের দিকে তাকাতে না পারে।
-আমরা তাহলে আসি।
-ওকে। "
মেহেরাব গাড়ির দরজার গা ঘেঁষে বসে আছে। আরোহী মেহেরাবের দিকে চেপে যেতে লাগলো। মেহেরাব ততই সরতে লাগলো । আরোহী বলে উঠলো
-তোকে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যেতে হবে৷
মেহেরাব আরোহীর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে পড়লো।
-তোর জন্য ভার্সিটির নামে দুঃনাম হোক আমরা কেউই চায় না।
-আমি ভার্সিটি ছাড়তে পারবো না। আমার অনেক স্বপ্ম। আপু আপনি এমনটা করবে না।
-তুই অন্য কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হো৷ সমস্যা নেই। কিন্তু এই ভার্সিটিতে তুই পড়তে পারবি না।
-কেন? আমার দোষ কোথায়।
-তোর দোষ কোথায়? প্রথমতো তুই মানুষ ঠকাস। মনে আছে গতকাল বিকালে এক অন্ধের সরলতা নিয়ে তার সাথে তুই ভিক্ষা করছিলি। তার থেকে টাকা চুরি করেছিস
মেহেরাব চেয়ে পড়ে আরোহীর দিকে৷ মাথাটা নিচু করে ফেলে।
(গতকাল বিকালে মেহেরাব এক অন্ধ বৃদ্ধাকে রাস্তা পাড় করে দিচ্ছিলো৷ আরোহী রাস্তার এপাড়ে বাইকের উপর বসে ছিলো। চোখটা মেহেরাবের উপর পড়লো। মেহেরাব রাস্তাটা পাড় করে দিলো তখনি আরোহী এসে
-কি রে টাকা রোজগারের নতুন রাস্তা খুজে পেলি নাকি৷ ভিক্ষা করছিস।
মেহেরাব কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে।
-তোর কি কমন সেন্স বলতে কিছু নেই। তুই যে ভার্সিটিতে পড়িস এই নামটা কেউ জানলে ভার্সিটির কেমন দুর্নাম হবে। তোকে দেখে নিবো। "
মেহেরাব চুপ করে রইলো। আরোহী চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ করে পিছনে ফিরতেই দেখলো
বৃদ্ধ লোকের পকেট থেকে টাকা বের করে নিয়ে চলে গেলো। " আরোহী হা হয়ে গেলো।)
আরোহী বলে উঠলো
-তুই আবার আজকে রিকশা চালাইছিস৷কার না কার রিকশা চুরি করে বিক্রি করছিস। তুই আমাদের ভার্সিটি পড়িস দেখে তোকে কিছু বলিনি। বললে আমাদের ভার্সিটির নাম খারাপ হবে। লোকে আঙ্গুল তুলে বড় বড় কথা বলতে পারবে। আর এটা আমি থাকতে কখনো হতে দিবো না। আমি ভালোর ভালো খারাপের খারাপ৷ তাই তোকে ঠান্ডা মাথায় বলে দি চলে যা।
-না আমি এই ভার্সিটিতেই পড়বো। আমি কোথা ও যাবো না। আপনি এমনটা করবেন না প্লিজ। আমি ওসব কিছুই আর করবো না প্লিজ।
-একটা প্রবাদ আছে জানিস, যে যে কাজে অভ্যস্ত সে সেই কাজ করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করলে ও ঘুরে ফিরে সেই কাজ করে৷ তুই ও তাই করবি৷ তোর যে ক্ষ্যাত মার্কা ড্রেস। নিজের ভালে চাস তো চলে যা।
-আমি যাবো না।
-তোকে কিন্তু উপরে পাঠাতে আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না। লেডি কুইন এমন কিছু নেই যে পাড়ে না।
মেহেরাব থুতলিয়ে
-আ আ আ আপনি সেই লেডি কুইন। যাকে সবাই চিনে।
-হ্যা। আমার Ego তে কেউ হাত দিলে তাকে আমি বাচিয়ে রাখি না। স্যার তোর সাথে আমার চ্যালেন্জ দিয়ে বড় ভুল করেছে৷ তাই বলি তুই অন্য ভার্সিটিতে যেয়ে পড়াশোনা কর। এখান থেকে চলে যা।
-আমার এই ভার্সিটিতে অনেক স্বপ্ন ছিলো আমি এখানে পড়াশোনা করবো জীবনে কিছু করবো। প্লিজ আপনি আমার সাথে এমনটা করবেন না।
-তোকে সোজা কথায় কাজ হবে না।
আরোহী আরো চেপে বসলো মেহেরাবের দিকে৷ মেহের গাড়ির দরজার সাথে সম্পূর্ণ ভার দিয়ে সরে বসলো। তখনি আরোহী চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে দিলো। মেহেরাব গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যায়। আরোহীর গাড়ি চলতে থাকে। আরোহী মুচকি হেসে দরজা অফ আটকিয়ে নেয় আর বলে
-ইগোতে হার্ট যে করবে তার সাথে এমনটাই হবে। ভালো কথায় কথা না শুনলে পস্তাতে হয় তাকে৷
কুহু আরোহীকে ফোন দেয় রিসিভ করতেই কুহু বললো
-কাজ হয়ে গেছে
-হুম আমার এখানে ও হয়ে গেছে। বেচে থাকলে হয়তো কখনো ভার্সিটির ধারে কাছে ঘেঁষবে না৷ আর মরে গেলো তো গেলো।
-তুই সত্যি একটা জিনিয়াস। তোকে বোঝা দায় এই ভালো এই খারাপ।
-জানিস তো আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দি না। মেহেরাব অন্যায় করছে শাস্তি পেলো।
-ঠিক আছে।
![]() |
লেডি কুইন পর্ব ৭ |
পরেরদিন সবাই ভার্সিটিতে আসলে ও মেহেরাব আসেনি ভার্সিটিতে। নেহা ক্যাম্পাস ক্লাসের সব জায়গায় মেহেরাবকে খুজলো কিন্তু পেলো না। হৃদয় এসে নেহার সামনে দাঁড়িয়ে
-দেখো তোমাকে ছাড়া আমার থাকাটা কষ্টকর৷ তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি প্লিজ আগের মতো করে নাও।
নেহা হৃদয়ের গালে চড় বসিয়ে
-তাই বলে তুই বাজে ছেলেদের সাথে মিশবি। নেশা করবি৷ সিগারেট আরো কি কি খায়ছিস।
হৃদয় গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে অবাক হয়ে গেলো৷ হৃদয় থুতলিয়ে
-ক ক কই আমি কিছু খায়নি। কে বলছে তোমাকে এসব।
-মিথ্যা বলবি না। মেহেরাব বলছে আমাকে। এই দেখ কি লেখা কাগজে।
নেহা হৃদয়ের দিকে কাগজ এগিয়ে দিলো৷ হৃদয় মনে মনে মেহেরাবকে গালি দিতে থাকে। ওকে পেলে ওকে মারবেই। ওর জন্যই এসব হচ্ছে। হৃদয় কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো
আপু আমি হয়তো আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ৫ মিনিট কথা বলতে পারবো না। কারণ আমার ড্রেসআপ ভালো না। আপনি কখনো চাইবেন না একটা গরীব ক্ষ্যাত ছেলের সাথে দাড়িয়ে তার কথা গুলো শোনা। আর সেই সাহস ও আমার নেই৷ তাই কাগজে লিখতে বাধ্য হলাম। জানি রাগ করলে ও কাগজটা এক টাইম খুলে পড়বেন তখন আপনার ভূল ধারণাটা ভেঙ্গে যাবে। আসলে হৃদয়ের কোন দোষ নেই। ও রিলেশনটা ধরে রাখার জন্য আমাকে চিনতে চায়নি। আপনাকে যদি ভালো না বাসতো তাহলে ও আমাকে চিনতো। আপনি ব্রেকআপ করবেন শুনে হয়তো সুযোগ পেতো কিন্তু না ও আপনার স্টাটাস ধরে রাখার জন্য আমাকে চিনেনি। শুনলাম ওর সাথে ব্রেকআপ করছেন। ওকে দেখলাম রাতে কিছু বাজে ছেলের সাথে মিশে নেশা করছে। ও খুব মেধাবী একটা ছেলে। জীবনে ও ভালো কিছু করতে পারবে। এভাবে সব শেষ করে দিবেন না। ওর পাশে থেকে ওকে উৎসাহ দেন। ভালোকিছু করার স্বপ্ন দেখান ও পাড়বে। দুজনে আবার আগের মতো করে এক হয়ে যান। আমাকে চেনার দরকার নেই। আমিও আপনাদের চিনবো না তবুও আপনি ওর কাছে ফিরে যান।
ইতি মেহেরাব।
হৃদয়ের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। নেহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় চোখটা মুছে
-তোমাকে এটা কখন দিলো।
-মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার টাইমে।
-আচ্ছা সরি৷ তুমি রিলেশন না করতে চাইলে আমার আপত্তি নেই৷ তুমি তোমার স্টাটাস নিয়ে থাকতে পারো। ভালো কাউকে পেয়ে যাবা তোমার লেবেলে৷ আমার চোখ খুলে গেছে। আমি কতবড় ভূলটা না করলাম। মেহেরাবের কাছে যেয়ে মাফ চাইবো। আসি।
নেহা হৃদয়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে
-কই যাবি তুই। তুই শুধু আমার। আমি ও তো ভূল ছিলাম। গরীবদের মানুষ বলে মূল্যায়ন করতাম না কিন্তু ওরাই যে আমাদের উপকারী বন্ধু। আমি ও মাফ চেয়ে নিবো৷ সরি। ।
হৃদয় হা হয়ে গেলো নেহার কথা শুনে। নেহা এগিয়ে এসে হৃদয়ের বুকে মাথা লুকালো।
স্যার মেহেরাবকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। আরোহী মনে মনে বলছে স্যার যতই খোঁজেন না কেন পাবেন না। পাপী হয়তো উপরে চলে গেছে। আরোহী হেসে দেয়।
(Waiting for next part)