লেডি কুইন পর্ব ৮| Leady Queen part 8 | storyBD.xyz

 লেডি কুইন 

পর্ব ৮ 

লেখা: Meherab Kabbo 




পরেরদিন 

আশফা আর শুভ্র ভার্সিটিতে আসে।  এসে মেহেরাবকে খুজলো কিন্তু পেলো না।  আশফা শুভ্রকে বললো 

-তোমার বন্ধুর তো কোন পাত্তাই নেই।  

-হয়তো টাকার প্রয়োজন তাই রিকশা চালাচ্ছে।  আসছে না ভার্সিটি। 

-আমার তো মনে হয় না ও তোমাকে বন্ধু মনে করে। 

শুভ্র অবাক হয়ে 

-মানে। 

-খুব সহজ।  ওর টাকার প্রয়োজন আমাদের তো বলতে পারে।  আমরা তো দিতাম। 

-ও কখনো নিবে না আর বলবে ও না।  

-কেন?  ও টাকা দিয়ে ওর বিপদ থেকে মুক্ত হতো পরে জব পেলে  বেতনের টাকা দিয়ে পরিশোধ করে দিতো।  বুঝি না তোমাদের বন্ধুত্ব।  একটা কথা বলো তো। 

-কি 

-মেহেরাবের বাবা কি করে? ওর বাসা কোথায়?

-যতদূর জানি ওর বাবা কৃষক।  এখানে কোন বস্তিতে নাকি উঠছে।   

-ঠিক আছে ক্লাস শেষ এ আমরা যাবো।  

-কেন? 

-ওকে না পেলে তুমি রিকশা চালাবে আমি রিকশায় বসে ঘুরবো।। 

-না আমি পারবো না। 

আশফা মুখটা গোমড়া করে ফেললো।  শুভ্র হেসে দিয়ে 

-আচ্ছা ঘুরাবো।  

আশফা হেসে দিয়ে 

-সত্যি। 

-হুম।  


নেহা হৃদয় ক্লাসে আসে চোখটা দরজার দিকে কখন মেহেরাব আসবে। কিন্তু মেহেরাবের আসার নাম নেই।  ক্লাস শেষ এ সবাই বেরিয়ে গেলো।  ক্যাম্পাসে কোথা ও মেহেরাব নেই। 


নেহা বাসায় ফিরলো মায়ের রুমে গেলো 

-কি রে ছেলেটার কোন খোঁজ পেলি।। 

-না মাম্মি।  পেলাম না। 

-পেলে একদিন বাসায় নিয়ে আছিস।  

-ঠিক আছে।  তোমার শরীর কেমন আছে এখন। 

-ভালো।  যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।  

-আচ্ছা।  



বিকালে আশফা আর শুভ্র গাড়ি নিয়ে বস্তিতে গেলো। যেয়ে দেখলো মেহেরাবের ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। এটা দেখে আশফা বললো 

-হয়তো বাসায় ফিরেনি। 

-হ্যা।  তো কাল তুমি রিকশা নিয়ে ঘুরাচ্ছো তো। 

-হুম।  




রাত আট টা ফ্লাইওভারের পাড়ে লিমন সহ আরো লোকজন একটা লোককে মেরে হাত ধরে আছে৷  লোকটা হাটুমুড়ে বসে আছে। হুশ নেই।  আরোহী বাইক চালিয়ে এসে বাইক থেকে নেমে 

-অবশেষে পেলি তবে একে। 

-হুম।  অনেক কষ্ট হয়েছে খুজতে।  সাপের গর্তের ভেতর লুকিয়ে ছিলো খুজে পাওয়া যাতে না যায়। 

আরোহী হেসে উঠে 

-সে যেখানেই লুকাক না কেন? লেডি কুইনের থেকে বাঁচতে পারে না পালিয়ে।  

-এখান থেকে ফেলে দিবো। 

-না৷  একটু কথা বলেনি।  


আরোহী লোকটার সামনে যেয়ে বসে 

-জীবনটা বদলে গেলো।  

লোকটা আরোহীর দিকে মাথা ঝুলিয়ে দিয়ে 

-আমাকে মেরে তুই কখনো বাঁচতে পারবি না।  তোর মৃত্যু খুব নিকটে৷  খুব নিকটে লেডি কুইন। 


আরোহী লোকটার গালে চড় মেরে কলার ধরে 

-কে মারবে আমাকে বল?  কে মারবে।  

লোকটা হেসে উঠলো 

-হাহাহাহা।  একটু সময়ের অপেক্ষা। তোরা সবাই মরবি।   এই শহরটা অন্যায়তে ভরে যাবে। 

-ভরে যাওয়ার আগেই আগাছা গুলোকে উপরে ফেলে দিবো।   


আরোহী উঠে দাঁড়াতে চোখের ইশারা করাতে লোকটাকে ফেলে দিলো।  তারপর যে যার মতো করে গেলো।  




এভাবে কেটে গেলো এ সপ্তাহ। মেহেরাবের কোন খোজ নেই৷   

নেহা ক্লাস বাদ দিয়ে রাস্তার দিকে যেতে লাগলো।তখনি আরোহী নেহাকে ডাক দিলো 

। নেহা আরোহীর সামনে যেতেই আরোহী বলে উঠলো 

-আন্টি অসুস্থ আমাকে বললি না কেন?  

-ঐ সময়ের এমন একটা অবস্থা ছিলো জানাতে পারিনি।

-ঐ দিকে কই যাচ্ছিস। 

- রাস্তায় যেয়ে দেখি মেহেরাবকে দেখা যায় কি না? এক সপ্তাহ হয়ে গেলো ওর কোন খোঁজ নেই। 

আরোহী একটু অবাক হয়ে 

-ও কি করছে।  তোর সাথে কোন খারাপ আচরণ করছিলো কি? 

-আরে না।  ওকে উপর থেকে যেমনটা দেখতে ও তেমনটা না।  ওর মনটা অনেক ভালো।  পরোপকারী।  

আরোহী অবাক হয়ে 

-মানে 

-সেদিন তো মেহেটাব ঠিক টাইমে রিক্সাটা নিয়ে না আসতো তাহলে মা কে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখতে হতো।  গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছিলো আমি হেপ্লের জন্য কি না করছি আর ও তখনি আসলো।  

আরোহী অবাক হয়ে গেলো। 

-তুই কি জানিস ও রিক্সাটা চুরি করছিলো।  

-তোকে কে বলছে ও রিক্সাটা চুড়ি করছে। 

-আমি দেখেছি।  ও তো চোর। 

-আরে না।  আমি যে হাসপাতালে ছিলাম ঐ হাসপাতালে রিকশা ওয়ালা ভর্তি ছিলো৷  মেহেরাব তো রিকশাওয়ালাকে ভর্তি করায় হাসপাতালে।  আর রিকশা ও জমা দিতে যাচ্ছিলো।  তখনি আমার সাথে দেখা।  

-তুই কি বলছিস এসব। 

-হ্যা রে ঠিকি বলছি।  ও ভার্সিটিতে আসার পথে দেখলো রিকশাওয়ালা রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখনি ও নিজে চালিয়ে নিয়ে যায়।  আচ্ছা থাক তুই আমি গেলাম।  


নেহা চলে গেলো।  আরোহীর মাথাটা ঝিমঝিম করছে। পাশে কুহু এসে দাড়ালো

লেডি কুইন পর্ব ৮  



আরোহী হাটু মুড়ে বসে পড়ে 

-এটা আমি কি করলাম।  আমি এত বড় অন্যায়টা করে ফেললাম না বুঝে। 

কুহু আরোহীর কাধে হাত রেখে 

-যা হবার হয়ে গেছে রে।  কি করবি এখন।  

- তুই জানিস তো আমি কোনো ভূল করে ফেললে তার জন্য আমি শান্তি পায় না।  আচ্ছা বাইকে বোস ব্যস্ত। 


আরেহী বাইকে যেয়ে বসলো। 

-কই যাবি। 

-যেখানে মেহেরাবকে ফেলে দিছি ঐখানে।  ওকে যদি পাওয়া যায় । 

-রিক্স হবে কিন্তু। 

-কোন রিক্স না।  কিছু তো একটা জানা যাবে। 


কুহুকে নিয়ে আরোহী বেরিয়ে পড়লো।  লিমন অরিন ওদের এভাবে বের হতে দেখে ওরাও বের হয়ে গেলো।   বাইক নিয়ে সেই জায়গায় গেলো৷  ওখানের আশপাশ দেখছে কিন্তু সব জায়গা ফাকা৷  আরোহীর চোখ সামনের দিকে আটকে গেলো।  মেহেরাবের স্যান্ডেল একটা দেখা যাচ্ছে।  আরোহী নেমে যেয়ে স্যান্ডেলের কাছে গেলো৷  পাশে জামার টুকরো রয়েছে একটা রক্ত লেগে আছে।  আরোহী স্যান্ডেল আর জামার টুকরো নিয়ে উঠতে পাশে আরেকটা স্যান্ডেল পেলো।  ঐটা নিয়ে মন খারাপ করে উঠে আসলো।  

লিমন অরিন বাইক থামিয়ে আরোহীর সামনে এসে 

-কি হয়েছে তোর।  এগুলো হাতে কেন? 

-আমি না বড় একটা ভূল করে ফেলেছি।  বিনা অপরাধে মেহেরাবকে শাস্তি দিলাম। 

-মন খারাপ করিস না।  যা হবার তো হয়ে গেছে। 

-ওর জন্য মায়া হচ্ছে।  ও গরীব  ওকে বুঝতেই পারলাম না।  

আরোহীর চোখের কোণে পানি জমাট বেঁধেছে।  আরোহী বাইক নিয়ে বাসায় এসে শাওয়ার নেয়।  পাক্কা ৩ ঘন্টা পর শাওয়ার থেকে বের হলো।   সবাইকে ফোন করে ডেকে আনলো৷ । 



বাইকের উপর আরোহী বসে আছে।  চোখটা রাস্তার ওপারে গেলো৷  বৃদ্ধ অন্ধ সেই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে।  আরোহী গাড়ি থেকে নেমে সেই বৃদ্ধার কাছে গেলো।  রাস্তা পার করে দিয়ে 

-আপনাকে একটা কথা জিঙ্গেস করবো। 

-হ্যা করো 

-একটা ছেলে আপনাকে রাস্তা পাড় করে দিছিলো।  তারপর আপনার পকেটে হাত দিয়ে টাকা নিছিলো আপনি ঐ ছেলেকে কিছু বললেন না কেন? 

-মারে তুমি কি ওকে চেনো৷  ওকে না আমি খুজতাছি। 

আরোহী অবাক হয়ে 

-কেন?

-ঐ বাজান আমাকে বলছিলো 

(-চাচা দুপুরে খাওয়া হয়েছে আপনার। 

-না বাজান৷  কে তুমি? 

-আমি আপনার ছেলের মতোই।  বিকাল হয়ে গেলো খেলেন না কেন?

-আসলে কি খাবো৷  আজ যা ভিক্ষা করেছি তা দিয়ে আমি খেলে তোমার চাচি খেতে পারবে না৷  সে তো আমার পথ চেয়ে বসে আছে। 

-কেন?  আজকে কি কম হয়েছে। 

-হ্যা রে বাজান।  আজকাল মানুষ বড় কিপটে।  মন দিয়ে দান করতে পারে না।  এক টাকার বেশি কেউ দেয় না।  

মেহেরাব চুপচাপ হয়ে গেলো। 

-এই যা ভিক্ষা হয়েছে তা দিয়ে কি কিনবো৷ না চাল হবে না ডাল।  

-আচ্ছা চাচা আমার কাছে তো ওত বেশি নেই।  আমার কাছে ২০ টাকার একটা নোট আছে।   এটা আপনি রাখেন আর  আমাকে ১০ টা টাকা দেন গাড়ি ভাড়া লাগবে। 

-তুমি আমার পকেট থেকে টাকাটা উঠিয়ে নাও।  

-ঠিক আছে। ) 


মা রে ছেলেটা চলে যাওয়ার পর আমি বাসায় যে গৃর্ণী জিঙ্গেস করলো 

-কই গো চাল আনছো। 

-কিভাবে আনবো।  আজ তো তেমন ভিক্ষা পাইনি।  

-কই কত পেয়েছো দাও।  রুটি খেয়ে তো থাকতে পারবো।  

বৃদ্ধা লোকটা টাকাগুলো বের দিলো। গৃর্ণী বলে উঠলো

-এত টাকা কোথায় পেলে তুমি।  তুমি বলে ভিক্ষা পাওনি।  তাহলে এখানে তো বেশি টাকা। 



মা রে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম আমার বউয়ের কথায়।  সে তো আমাকে এক সপ্তাহ আসতেই দেয়নি।  আমি ছেলেটাকে খোজার জন্য ঐ খানে দাঁড়িয়ে থাকি।  আল্লাহ জেনো ওকে বাঁচিয়ে রাখে। ওর সকল কষ্ট দূর করে দেয় জেনো।  

আরোহী বলে উঠলো 

- দোয়া করে জেনো বেচে থাকে। 


আরোহী চোখের কোণের পানি মুছে চলে আসলো আর থাকলো না।  সবাইকে ফোনে ম্যাসেজ করে দিলো।  সব হাসপাতালে খোজ নেওয়ার জন্য কোথা মেহেরাব আছে কি না।  


খুব চিন্তার ভেতর পড়ে গেলো আরোহী।  নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।  



দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেলো কিন্তু কোথা ও মেহেরাবের খোজ পেলো না।   মেহেরাবকে খোজার জন্য শুভ্রর থেকে ঠিকানা নিয়ে বস্তিতে আসলো। মেহেরাবকে খুঁজতাছে দেখে করিম চাচা এগিয়ে এসে যা বললো তা শুনে আরোহী পুরো থ হয়ে গেলো। 


(Waiting for next part)



মেহেরাব কাব্য এর লেডি কুইন 


lady queen bangla valobasar golpo 


গল্প লেডি কুইন 


লেডি কুইন

Post a Comment

Thanks for your Support 💖

Previous Post Next Post