"বর্ষা"Borsha...sad Love Story

গল্পের নামঃ "বর্ষা"

লেখাঃ মহতামীম হাসান মীম 


 ঝড়ো হাওয়া বইছে।কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলি ঋরে পড়ছে বর্ষার কালো লম্বা খোলা চুলে।কালো পিচের রাস্তাটা ভেজা রয়েছে।কিছুক্ষণ আগেই ঝিরিঝিরি করে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এসেছিল।বর্ষার জেদেই এই বৃষ্টি-বাদলের দিনেও বেরোতে হলো।


দাঁড়িয়ে আছি মালীবাগের সেই অতিপ্রাচীন আবুল হোটেলের সামনে।বারবার হাতঘড়িটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে আমার।পেছন থেকে কাধের উপর একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে সোজা ঘুরে দেখি আমার মামাতো ভাই খালিদ,হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।

আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো, "অনেকবড় জ্যামে ফেঁসে গিয়েছিলাম।বুঝিসইতো অফিস টাইম শেষ হওয়া মানে সবার বাড়ি ফেরার তাড়া।"


আমি হালকা হেসে তার সাথে কোলাকুলি করলাম।খালিদ ভাই আমার বড়ো লাগেজটা উঠাতে যেতেই আমি তাকে বাধা দিলাম।কিন্তু কে শোনে কার কথা। নিজের অফিসের ব্যাগটা এক কাধে নিয়ে আমার লাগেজটা বয়ে নিয়ে চলতে লাগলো।


আমি ঢাকা শহর চিনি না বললেই চলে।দু-তিনবার এসেছি বটে তবে তা নিছক আত্মীয়ের বাড়ি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।চাকরীর খোঁজে এসে তাই খালিদ ভাইয়ের ফ্ল্যাটেই উঠতে হচ্ছে আমাকে।মামার কড়া নির্দেশ আমি যেন খালিদ ভাইয়ের সাথে সাথেই সব জায়গায় বিচরণ করি। আপত্তি করার কোনো সুযোগ নেই দেখে আমিও তার কথায় সায় দিয়েছি।


একটা চওড়া রাস্তা দিয়ে ঢুকে পাচঁ মিনিট যেতেই একটা সাততলা বিল্ডিংএর ভেতরে ঢুকে পড়লাম।সাত তলায় যাওয়ার জন্য কোনো লিফট না থাকায় সিড়িঁ ভেঙে উঠতে হলো।


দুই রুমের ছোটখাটো সিমসাম ফ্ল্যাট। খালিদ ভাই একেঁতো গোছালো স্বভাবের আবার তিনি একাই থাকেন তাই সবকিছুই অনেক সুন্দরভাবে গোছানো।


"আবিদ,ওঠ।আর কতো ঘুমাবি।তোর না দশটার সময় ইন্টারভিউ?"

খালিদ ভাইয়ের ডাক শুনে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম।ভাই আজকের দিনটা অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।দুজনে বেরিয়ে পড়লাম বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্যে।ইন্টারভিউটা ওখানেই।


"বর্ষা,তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?"আমার কথায় বর্ষা একটা মিষ্টি হাসি দিলো।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি তার লাল ঠোঁটদুটির দিকে।বর্ষা আমার কাধে তার মাথাটা রাখলো।দুজনে রিকশায় বসে সামনের ব্যস্ত রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছি।

ঢাকা ভার্সিটির সামনে দুজনে নেমে টিএসসিতে গেলাম।বর্ষা একটা আইসক্রিম হাতে বসে আছে আর আমি ওরদিকে একনজরে তাকিয়ে আছি।


চাকরিতে প্রথমদিন আজ আমার।সাদা ফুলহাত শার্ট সঙ্গে কালো প্যান্ট ও গলায় কালো টাই পরে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে।খালিদ ভাই আর আমি একসাথেই বেরোলাম।তিনি আমাকে ব্যাংকের সামনে নামিয়ে কাজে চলে গেলেন।নিজের কেবিনে ঢুকে এতোক্ষণে যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলাম।কাজের চাপে বাবাকে ফোনই করতে পারলাম না সারাটাদিন।


বাসে করে একাই ফিরছি খালিদ ভাইয়ের ফ্ল্যাটে।বাস জ্যামে আটকে রয়েছে গত দশমিনিট ধরে।আমার পাশের সিটটা এতোক্ষণ খালিই ছিলো।তবে হঠাৎই একটা মেয়ে এসে সেই জায়গাটা দখল করে বসলো সঙ্গে আমার মনের সিটটাও তার দখলে চলে গেল।

ফর্সা চিকন মুখখানি তাতে আবার কাজলে লেপা দুটো অপূর্ব সুন্দর চোখ। কালো চুলগুলো খোলা অবস্থায় রয়েছে এতে তাকে কোনো স্বর্গের পরীর চেয়ে কোনাংশে কম লাগছে না।আমি বুঝতেই পারলাম না কখন বাসটা চলতে শুরু করেছে।পলকহীনভাবে চেয়ে রয়েছি নাম না জানা মেয়েটার দিকে।


গত এক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে আলাপ করতে পারিনি।আজ সাহস করে তার নামটা জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে উত্তর দিলো, "আমার নাম বর্ষা।"


কিভাবে যেন আমাদের পরিচয়টা বাস যাত্রী থেকে জীবনসঙ্গীতে পরিণত হলো।

নিজের কেনা ফ্ল্যাটটাতে আমার জীবনেরসঙ্গী বর্ষাকে সাথে নিয়ে উঠলাম।সুখেই চলছিল আমাদের দুই যাত্রীর ছোট্ট সংসারটা।


কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ।বোঝাই যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হবে।বর্ষা আমাকে কল করে জানালো সে তার অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে যাবে।আমিও আমার কাজ সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে একটা বাসে চড়ে বসলাম।


মুষলধারে বৃষ্টি পতনের তুমুল আওয়াজের মধ্যেও একটা গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।কতকগুলো নরপশু মিলে ছিড়ে খাচ্ছে আবিদের প্রিয় বর্ষাকে।একটাসময় নিস্তেজ হয়ে গেল বর্ষার শরীরটা।পশুগুলো পাশের বড় ডাস্টবিনটাতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো বর্ষার শীতল দেহটা যেন এতোক্ষণ সে কোনো খেলনার পদে আসিন হয়ে মজা দিয়ে চলেছিল ঐ পশুগুলোকে।


চোখদুটো খুলতেই দেখি সামনে খালিদ ভাই।তিনি অতিকষ্টে চোখের পানি আটকিয়ে বললেন,"বর্ষার লাশ দাফন করা হয়ে গেছে।"

(সমাপ্ত)

Post a Comment

Thanks for your Support 💖

Previous Post Next Post